অচিন গাছকে চেনালেন মীর্জা নাসির

সাজেদুল করিম সুজন:
অবশেষে পরিচয় মিলল অচিন গাছের। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত মৌজায় অবস্থিত মোরেসী পরিবারের (পাকুর জাতীয়) একটি গাছ। এ গাছটির সঠিক নাম জানা না থাকায় যুগযুগ ধরে এটিকে অচিন গাছ হিসেবে ডাকা হচ্ছে। মজার বিষয় হলো এই অজানা অচেনা গাছটিকে কেন্দ্র করে এলাকাটির নামও হয়েছে অচিন গাছ।
গাছটির বয়স নিয়েও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কেউ বলছে গাছটির বয়স হবে ৫০০ বছর আবার কেউ বলছেন ৩০০ বছর। তবে গাছটি যে অতি পুরনো তাতে কোন সন্দেহ নেই। গাছ নিয়ে রয়েছে নানা ধরণের লোককথা। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকট গাছটি অতি পবিত্র এবং তারা এর ডাল বা পাতা ছিড়তে দেয় না। তারা মনে করে এতে স্থানীয় অধিবাসীদের বড় ধরণের বিপদ হতে পারে। এ গাছটি দেখতে সারাবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। কিন্তু কেউ এর নাম বলতে পারেননি।এমনকি উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিকটও এর নাম ছিল অজানা।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক মীর্জা মো: নাসির উদ্দিন এ গাছটিকে সনাক্তকরণের জন্য ২০১২ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁকে কিছুটা সময়ের জন্য সহায়তা করেন আনন্দমোহন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক দেবাশীষ চন্দ্র রায়। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও সফলতা না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আবারও গুগল এবং পৃথিবীর কয়েকটি দেশের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও হার্বেরিয়াম সংগ্রহশালাগুলো খুঁজতে গিয়ে পেয়ে যান কিছু তথ্য। সেই তথ্য ধরে এবং প্রকৃত গাছের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে মিল খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি পেয়ে যান এর নাম। এ উদ্ভিদটি দেখতে স্থানীয় ‘পাইকড়’ গাছের মতোই।
অধ্যাপক মীর্জা মো: নাসির উদ্দিন বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে গাছটিকে চিহ্নিত করেন এবং অধিকতর যাচাইয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সরদার নাসির উদ্দিন, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবা সুলতানা এবং উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ ছায়েদুর রহমানের নিকট প্রেরণ করেন। গত ৩ অক্টোবর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সরদার নাসির উদ্দিন নিশ্চিত করেন উদ্ভিদটি মীর্জা মো: নাসির উদ্দিনের প্রেরিত নাম ও ধারণা সঠিক বলে ই—মেইলে জানান। গত ১৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় বৈজ্ঞানিক প্রমাণসহ বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সকল তথ্য—উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলা হয়, এটি একটি সনাক্তকৃত গাছ তবুও স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষার্থে গাছটিকে ‘অচিন গাছ’ বলেই ডাকা যেতে পারে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!