শিশু দুটির জন্ম ভারতে তাই মরদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ

বিভাস প্রতিবেদক:
দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হতে গিয়ে বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে নীলকমল নদীতে নিখোঁজ বাংলাদেশী দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার দুপুর দেড়টায় জিরোলাইনে ভারতীয় অংশে বিএসএফের ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেওটি—১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ এই মরদেহ দুটি উদ্ধার করে। ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার নং ৯৪৩ এর পাশ থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ ভারতের ভিতরে নীলকমল নদীতে স্থানীয়রা শিশুর দুইটির মরদেহ ভাসতে দেখে। শিশুর মরদেহ ভাসার খবর সীমান্তের দুই দেশের স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সীমান্তে বিজিবির অতিরিক্ত টহল জোড়দার করে এবং খবর পেয়ে ভারতীয় সেউটি—১ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে নীলকমল নদী থেকে শিশুর দুইটির মরদেহ উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে যায়। নিহত শিশু দুটির নাম পারভীন (৯) ও সাকিবুর (৫)। তারা কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম সুখাতি গ্রামের রহিচ উদ্দিন (৩৮) ও তার স্ত্রী সামিনা বেগম (৩৫) দম্পতির সন্তান।
নিহত শিশুর চাচা আজিজুল হকসহ স্থানীয়রা জানান, ১৫ বছর আগে এই দম্পতি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ইট ভাটায় কাজ করতে যান। দুই দেশের দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য শুক্রবার রাতে স্ত্রী ও দুই সস্তানসহ কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার সেউটি—১ সীমান্তে এলাকায় আসেন রহিচ উদ্দিন। এ সময় পাচারকারী দালালরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাদেরকে নীলকমল নদীর পাড়ে নোম্যান্স ল্যান্ড এনে দাঁড় করিয়ে রেখে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আসতে বলে। এ অবস্থায় লোকজনের কথা বলার শব্দ শুনে ভারতীয় সেউটি—১ ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে তাদের ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে দুই সন্তনকে নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করেন সামিনা বেগম। কিন্তু তীব্র স্রোতের মধ্যে হাতের বাঁধন খুলে ডুবে যায় দুই শিশু। ডুবে যাওয়ার দুই দিন পর রবিবার তাদের মরদেহ ভেসে উঠে। বাবা—মা বাংলাদেশি হলেও শিশু দুটির জন্ম ভারতে হওয়ায় তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বের কোন প্রমাণপত্রও দেখাতে না পারায় বিজিবির কাছে হস্তান্তর না করে শিশু দুটির মরদেহ ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ।

নিহত শিশুর বাবা রহিচ উদ্দিন ও চাচা আজিজুর হক জানান, পরিবার নিয়ে নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য দুই দেশের দালালদের সাথে প্রথমে ভারতীয় ২২ হাজার রুপী চুক্তি হলেও দুই দেশের দালালরা ভারতীয় ৪০ হাজার রুপী নিয়েছে। তারা সীমান্তে এনে অন্য ২০/২৫ জন নারী,পুরুষ ও শিশুর সাথে তাদেরকে একটি বাড়িতে রাখে। শুক্রবার গভীর রাতে কাঁটাতারের বেড়া কেটে তারা নদীর পাড়ে নিয়ে আসলেও ভারতীয় দালাল সিরাজুল ইসলাম,নয়ন মিয়া ও ময়না মিয়া আরও বাংলাদেশি ১০ হাজার টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
রহিচ উদ্দিন আরও বলেন, নীলকমল নদীর পাড়ে কিছুক্ষণ পর ভারতীয় বিএসএফ ধাওয়া দিলে দালালরা দ্রুত নদী পার হতে বলে। আমি ব্যাগ নিয়ে সাঁতার দেই আর আমার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করে। কিন্তু অন্ধকারে তীব্র স্রোতের বেগে স্ত্রীর হাত থেকে সন্তানরা নিখোঁজ হয়। এরপর পানিতে ডুবে অনেক খোঁজাখুজি করেছি কিন্তু সন্ধান পাইনি। তিনি তার দুই শিশুর মরদেহ নেওয়ার জন্য দুই দেশের সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সঙ্গে লালমনিহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার কবির হোসেন বিএসএফ কর্তৃক দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বাংলাদেশী নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রও দেখাতে না পারায় ভারতীয় বিএসএফ নীলকমল নদী থেকে শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। সেই সাথে সীমান্তে শান্তি শৃংখলা রক্ষার্থে ২৪ ঘন্টা বিজিবির টহল অব্যাহত আছে। তিনি আরও জানান, রবিবার সকালে ওই সীমান্তে মেইন পিলার নং ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এসের পাশে দুই দেশের কোম্পানি পর্যায়ে শান্তি বজায় রাখার জন্য এক সৌজন্যমূলক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় বিজিবির ৬ সদস্যের পক্ষে নেতৃর্ত্ব দেন কাশিপুর কোম্পানী কমান্ডার কমির হোসেন ও ভারতীয় ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেওটি—১ ক্যাম্পের ৬ সদস্যের বিএসএফের পক্ষে নেতৃর্ত্ব দেন কোম্পানী কমান্ডার এস,এইচ,শংকর কুমার এসি।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!