ভূমি অধিগ্রহন বিলম্বে কুড়িগ্রামে থেমে আছে দাশেরহাট বাইপাস সড়কের কাজ

আব্দুল খালেক ফারুক:
ভূমি অধিগ্রহনে বিলম্বের কারণে কুড়িগ্রামে দেড় বছর ধরে থেমে আছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দাশেরহাট বাইপাস সড়ক। কুড়িগ্রাম শহরের যানজট নিরসন ও সোনাহাট স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন সহজতর করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি গ্রহন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু কুড়িগ্রামে সোনাহাট সড়কের বীরপ্রতীক তারামন বিবির মোড় থেকে দাশেরহাট পর্যন্ত এই বাইপাস সড়কটির কাজ বন্ধ থাকায় স্থানীয় জনমনে দেখে দিয়েছে নানা শঙ্কা। তবে দ্রুত ভূমি অধিগ্রহনের কাজটি শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ৬৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী সোনাহাট স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্ত করার প্রকল্পটি অনুমোদন হয় একনেকে। ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে এই প্রকল্প। প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি ৩৪ ভাগ। এই সড়কটির অন্তর্ভুক্ত বীরপ্রতীক তারামন বিবির থেকে দাশেরহাট পর্যন্ত ৫ প্রায় কিলোমিটার বাইপাস সড়কটি। এই সড়কটি চালু হলেও শহরের যানজট নিরসনের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের আশা করছে এলাকার মানুষ। চলমান সোনাহাট সেতু ও সড়কটি নিমার্ণ শেষ হলে ভারত থেকে অতি সহজে পণ্য আমদানি করা যাবে। ফলে এই এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।


কুড়িগ্রাম শহরের সানরাইজ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক শাহজাহান মিয়া বলেন, বাইপাস সড়কটি চালু হলে শহরে যানজট থাকবেনা। সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে আসা গাড়ি শহরে না ঢুকে সরাসরি চলে যেতে পারবে। কৃষকদের উৎপাদিত সবজি দ্রুত রাজধানীতে যেতে পারবে। তারামন বিবির মোড় এলাকার টি স্টল মালিক মাঈদুল ইসলাম জানান, এই বাইপাস সড়ক চালু হলে ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা হবে। এলাকার রোগী পরিবহনে আর কোন সমস্যা থাকবেনা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বাইপাস সড়কটির জন্য প্রায় ৪১ একর জমি অধিগ্রহন করতে হবে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভূমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া শুরু হবার পর সড়কের গতিপথ পরিবর্তনসহ নানা কারণে এই প্রক্রিয়া অগ্রসর হচ্ছে ধীর লয়ে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের জুন মাসে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় দেড় বছর আগে কাযার্দেশ পেলেও একটি কালভার্ট নিমার্ণ ছাড়া আর কোন কাজ করতে পারেনি। তাই সড়কটি নিয়ে স্থানীয় জনমনে রয়েছে নানা শঙ্কা।
সড়কটির সর্বশেষ গতিপথ অনুযায়ী বীরপ্রতীক তারামন বিবির মোড় থেকে দাশেরহাট জামিয়া এছহাকিয়া মাদ্রাসার পাশে আর কে রোডের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এখনও স্থাপনার সংখ্যা নিরুপনের কাজ চলমান আছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বাইপাস সড়কের প্রস্তাবিত গতিপথে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের চেরেঙ্গা এলাকায় একটি কালভার্ট নিমার্ণ করা হয়েছে। অপর একটি ছোট বিজ্র ভেঙে দেয়া হলেও কোন কাজ হয়নি। চেরেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা অমল রায় জানান, সরকার খাস করবে অনেক দিন ধরে শোনা গেলেও কোন অনেক মানুষ নোটিশ পায়নি। এই গ্রামের কৃষক খোকা মিয়া বলেন, ‘একবার ওপাকে একবার এপাকে রাস্তা হইবে শুনি। কামতো হয়না।’ মতিয়ার রহমান জানান, ঠিকাদার তিন মাস ধরে কোন কাজ করছেনা। তাই সড়কটি আদৌ হবে কীনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন এলাকার মানুষ।
এদিকে জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে সড়কটির গতিপথ পরিবর্তন, বিভিন্ন আপত্তি শুনানি, স্থাপনার সংখ্যা ও মূল্য নিধার্রণে বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করতে বিলম্ব হচ্ছে।
ঠিকাদারী সংস্থা আমিনুল ইসলাম প্রাইভেট লিমিটেড এর প্রকল্প পরিচালক মো: আরিফুল ইসলাম সেলিম জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অফিস স্থাপন ও মালামাল সংরক্ষণের জন্য তাদের অনেক খরচ হলেও জমি অধিগ্রহন না হওয়ায় তাদের প্রতিনিয়ত লোকসান গুণতে হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, মূলত অধিগ্রহন বিলম্ব হওয়ায় থেমে আছে বাইপাস সড়কটির কাজ। এই প্রক্রিয়া আরো বিলম্ব হলে প্রকল্পে সময়সীমা ও ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাইপাস সড়কটি করার জন্য ১৮ মাসের চুক্তি হয়েছে। যা ডিসেম্বরে শেষ হবে। নিমার্ণ সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করতে না চাইলে নতুন করে দরপত্র আহবান করতে হবে। নতুন দরে দরপত্র আহবান করা হলে বাড়বে খরচ।
অবশ্য কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মো: নজরুল ইসলাম আশা করছেন দু’এক মাসের মধ্যে অধিগ্রহন শেষ হবে। ফলে মেয়াদ নাও বাড়াতে হতে পারে।
ভূমি অধিগ্রহনে তেমন কোন জটিলতা নেই বলে জানিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, সড়কের গতিপথে কিছু জায়গায় পরিবর্তন হয়েছে। জমি অধিগ্রহনের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করা হয়েছে। আশা করা যায় দ্রুত অধিগ্রহনের কাজ শেষ হবে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!